উলুবেড়িয়া, হাওড়া, ২৮ মে ২০২৫: হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ বিভাগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এলাকার মানুষের জীবনে এক নতুন আলোর দিশা দেখিয়েছে। বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহ্গত আলী সাহেবের নিরলস প্রচেষ্টা এবং দূরদর্শী পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ পরিকাঠামোয় এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, যা স্থানীয় জনজীবনে স্বস্তি ও গতি এনেছে।
বদলে যাওয়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা: পরিসংখ্যানের আলোকে
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। এই দুই আর্থিক বছরে মোট ৯৩টি নতুন ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের হার কমেছে। এই সময়কালে ৪০০১টি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা হাজার হাজার পরিবারের অন্ধকার ঘুচিয়ে তাদের জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছে।
এছাড়াও, বিদ্যুৎ সরবরাহকে আরও সুসংহত করতে ৮৭৭টি নতুন ইনফ্রাস্ট্রাকচার পোস্ট (খুঁটি) স্থাপন করা হয়েছে, যা বিদ্যুতের তারের নিরাপদ সংস্থাপন এবং বিতরণে সহায়ক হয়েছে। ২৩৩টি ট্রান্সফর্মার এলাকায় এবি কেবল (Aerial Bunched Cable) বসানো হয়েছে। এই আধুনিক কেবলগুলি বিদ্যুতের অপচয় রোধ করে এবং চুরি বা দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি কমায়, যা গ্রাহকদের জন্য আরও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
উলুবেড়িয়া সি.সি.সি. এবং গজুপুর সি.সি.সি.: উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু
উন্নয়নের এই ধারায় উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের দুটি প্রধান কেন্দ্র, উলুবেড়িয়া সি.সি.সি. (Consumer Care Centre) এলাকা এবং গজুপুর সি.সি.সি. এলাকা বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে।
* উলুবেড়িয়া সি.সি.সি. এলাকায়: এখানে ৪১টি নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক স্থিতিশীলতা এনেছে। এই অঞ্চলে ১২৯১টি পরিবার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। এছাড়াও, ৫৭৯টি মিটার ইনফ্রাস্ট্রাকচার পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং ৪১৪টি ট্রান্সফর্মার-এ এবি কেবল বসানো হয়েছে, যা এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে করেছে আরও উন্নত ও সুরক্ষিত।
* গজুপুর সি.সি.সি. এলাকায়: এই অঞ্চলেও উন্নয়নের হাওয়া লেগেছে। এখানে ৩২টি নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে এবং ১০৩৬টি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, যার ফলে অসংখ্য পরিবার প্রথমবার বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছে। পাশাপাশি, ৭৫৬টি নতুন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩৪টি ট্রান্সফর্মার এলাকায় এবি কেবল বসানো হয়েছে, যা গজুপুর অঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
জনগণের স্বস্তি ও কর্মাধ্যক্ষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকা
স্থানীয় বাসিন্দারা বিদ্যুৎ বিভাগের এই উদ্যোগে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহে পূর্বে যে সকল সমস্যা যেমন – লো ভোল্টেজ, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং নতুন সংযোগ পেতে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল, তা এখন অনেকাংশে কমেছে। উলুবেড়িয়া সি.সি.সি. এলাকার একজন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, “আগে সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই বিদ্যুৎ চলে যেত, আর লো ভোল্টেজের কারণে টিভি বা ফ্রিজ চালানো কঠিন ছিল। এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। শাহ্গত আলী সাহেবের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”
বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহ্গত আলীর সময়োপযোগী পরিকল্পনা, সক্রিয় তদারকি এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।
উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী প্রভাব
এই বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়নের ফলে কেবল গৃহস্থালীই নয়, এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ শিক্ষার মান উন্নত করতে, স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, ভবিষ্যতেও এ ধরণের জনমুখী উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত থাকবে। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের এই বিদ্যুৎ বিপ্লব নিঃসন্দেহে এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
