আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা তরুণীর জন্য বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের একটি অংশ বুধবার সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানে অংশ নেয়। এই প্রতিবাদী অভিযানে সাধারণ মানুষও তাদের সঙ্গে হেঁটে সামিল হন। জুনিয়র ডাক্তাররা এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেন যে, প্রমাণের অভাবে ধৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন। সিবিআইকে চাপ প্রদান করতেই এই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই কর্মসূচিতে জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনগুলিও সক্রিয় ছিল। অন্তত ৮০টি সংগঠন সল্টলেকে বিচার দাবিতে স্লোগান তোলে। সিবিআই দফতরের সামনে পৌঁছে তারা একটি পথসভা করে। জুনিয়র ডাক্তারের সংগঠন, জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট (জেডিএফ), মশাল মিছিলের আয়োজন করে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত। বর্তমানে আরজি করের ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে, এ কারণে এই অভিযানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একই সময়ে, শিয়ালদহেও পাল্টা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউবিজেডিএ) এনআরএস হাসপাতাল থেকে শিয়ালদহ আদালত পর্যন্ত জমায়েত করে। সেখানেও নির্যাতিতার জন্য দ্রুত বিচার দাবি করা হয়।
সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের জন্য বুধবার বিকেল থেকে জমায়েত শুরু হয়। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স’ এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিবাদী সংগঠন একত্রিত হয়ে ‘অভয়া মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে। তারা সিজিও পর্যন্ত হাঁটার পরিকল্পনা করে। রাত ৮টার পরে তারা সিজিওর কাছে পৌঁছায়, যেখানে একটি পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। জুনিয়র ডাক্তাররা পথসভায় হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচারের’ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেন। সিবিআই কর্তৃক আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একাডেমির প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হলেও, প্রমাণের অভাবে তার মুক্তি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি করছে এবং এর ফলে সন্দীপ ঘোষ ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, “সিবিআই গত ২১ তারিখে আদালতে সন্দীপ ঘোষকে হাজির করানোথাকেনি, যেখানে তারা অগ্রগতি দেখাচ্ছে না। নির্যাতিতার পরিবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।”
সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের অভিযানের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। পৃথকভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মশাল মিছিল করে জেডিএফ। এই দু’টি কর্মসূচি একত্রিত হয়ে বিচার দাবিতে স্লোগান শুরু হয়। এক প্রতিনিধি বলেন, “আমরা আরজি কর-কাণ্ডের বিচার নিয়ে হতাশ, এখনো পর্যন্ত কিছুই হয়নি।” অংশ নেয়া এক সাধারণ নাগরিক মন্তব্য করেন যে, গ্রেফতার হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার একা এই ধরনের কাজ করতে পারে না, এর পেছনে আরো বড় মাথাব্যথা রয়েছে। যতদিন না তাদের ধরা হচ্ছে, ততদিন তারা রাস্তায় অবস্থান করবেন।
শিয়ালদহে পাল্টা জমায়েতও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জেডিএফ আন্দোলন শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল। দেবাশিস, অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দেরা এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ। বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় ১৭ দিন অনশনও করেন তারা। তাদের দাবি ছিল রাজ্যের হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ প্রতিরোধ করা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার পর, জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠন জেডিএ আত্মপ্রকাশ করে। জেডিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পাল্টা সংগঠনের। তারা ১০ দফা দাবির বিরুদ্ধে ৮ দফা দাবি পেশ করেছে। শ্রীশ চক্রবর্তী এই সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক। বুধবার দুপুরে শিয়ালদহে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, “আরজি করের ঘটনার পর ৮০ দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সিবিআই তদন্ত শেষ করতে পারেনি।” সংক্ষিপ্তভাবে বললে, সংগঠনটি দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছে এবং রোগী পরিষেবায় কোনও ব্যাঘাত ঘটাবে না বলে উল্লেখ করেছে।