তারিখ, ২০ এপ্রিল, রাত আন্দাজ পৌনে একটা। সোর্স মারফত খবর এল, হরিদেবপুর থানার এলাকায় নবপল্লী অঞ্চলে রমরম করে চলছে একটি ভুয়ো কল সেন্টার, যেখান থেকে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VOIP) ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনের নাগরিকদের ‘অ্যাকশন ফ্রড স্কোয়াড ডিপার্টমেন্ট’ নামক কাল্পনিক সংস্থা থেকে ফোন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাঁদের কম্পিউটারের সমস্যা সমাধান করে দেবে সংস্থার কর্মীরা, শুধু নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে কিছু টাকা।
খবর পেয়ে কল সেন্টারে দলবল নিয়ে হানা দেন হরিদেবপুর থানার ওসি ইন্সপেক্টর প্রশান্ত মজুমদার এবং অ্যাডিশনাল ওসি ইন্সপেক্টর রাজেশ মিঞ্জ। যে বাড়ি থেকে কল সেন্টার চালানো হচ্ছিল, তার মালিক জে রবিনসন মিনজ এবং যজুর দ্বিবেদী নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়, পাওয়া যায় চালু অবস্থায় একাধিক কম্পিউটার। প্রশ্নের উত্তরে ওই দুজন জানায়, VOIP ব্যবহার করে ব্রিটেনে তথাকথিত ‘কাস্টমার’-দের ফোন করে বলা হত, তাঁদেরকে জালিয়াতি অর্থাৎ ‘ফ্রড’-এর কবল থেকে বাঁচাবে অ্যাকশন ফ্রড স্কোয়াড ডিপার্টমেন্ট, কারণ তাঁদের কম্পিউটার নাকি তাঁদের অজান্তেই ‘হ্যাক’ করা হয়েছে, এবং সেই হ্যাকিং-এর খবর মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে অ্যাকশন ফ্রড স্কোয়াড ডিপার্টমেন্টের কাছে।
এছাড়াও টিমভিউয়ার, এনিডেস্ক, সুপ্রিমো ইত্যাদি সফটওয়্যারের সাহায্যে প্রতারিত ব্যক্তির কম্পিউটারের দখল নিয়ে সেখান থেকে টাকাকড়ি লেনদেন করত অভিযুক্তরা, আবার অনেকসময় কম্পিউটার থেকে কার্ড নম্বর, সিভিভি নম্বর এবং ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর সংগ্রহ করে অবৈধভাবে টাকা তুলত অনেকের অ্যাকাউন্ট থেকে। বলা বাহুল্য, তাদের ‘সংস্থা’ সংক্রান্ত কোনরকম বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেনি দুই অভিযুক্ত। প্রায় এক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর দুজনকে গ্রেফতার করেন প্রশান্ত, এবং কল সেন্টার থেকে বাজেয়াপ্ত করেন চারটি হার্ড ড্রাইভ, একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন, তিনটি সিম কার্ড, এবং ‘সিটি অফ লন্ডন পুলিশ’-এর নামাঙ্কিত আপাতদৃষ্টিতে জাল লেটারহেড সহ আরও বেশ কিছু নথিপত্র।
এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে হরিদেবপুর থানায়, তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন রাজেশ মিঞ্জ। আগামি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন জানিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে অভিযুক্তদের।
The Report Published by : Kolkata Police