আবারো মব লিঞ্চিং এর শিকার মুসলিম যুবক সন্দেহ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবার একজন ফেরিওয়ালাকে।
বীরভূম জেলার কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা বছর 35 এর যুবক মোতাহার শেখ সংসার পরিচালনার তাগিদে মশারী ফেরি করতে গিয়েছিলেন ঝাড়খন্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার মির্জা চৌকি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়।
বেশ কয়েক বছর যাবৎ ঐ এলাকায় ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এ যুবক। 13, 04, 2022 সেখানে যান এবং তার দুইদিন পরে 16,04,22 সন্ধ্যার পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে অন্য স্থানে অবস্থানরত তার গ্রামের অন্য ফেরিওয়ালারা খোঁজ নিতে গেলে সেখানের স্থানীয় মানুষ একটি অজ্ঞাত পরিচয় মানুষের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ মোবাইল এর মাধ্যমে দেখিয়ে বলে এই লোকটি তোমাদের কিনা দেখো ! রেল লাইনের ধারে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে সাহেবগঞ্জ জি আর পির ত্ত্বাবধানে দেহ আছে। পরবর্তীতে দেহ শনাক্ত করে 18 তারিখ বিকেল পর্যন্ত পোস্টমর্টেম করে বাড়ি পৌঁছালে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে, পরে বিকেলের দিকে দাফন পর্ব শেষ হয়।
এই খবর পেয়ে গত 20 তারিখ, অল ইন্ডিয়া ইমামস কাউন্সিলের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুত তাওয়াব ও পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার বীরভূম জেলা সভাপতি জসিমুদ্দিন শেখ ও জেলা সেক্রেটারী সেতাবুদ্দিন মন্ডল মহাশয় সহ একটি প্রতিনিধি দল পরিবারের খোঁজখবর,সমবেদনা প্রকাশ ও আইনি পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে কাশিমনগর পৌঁছালে এলাকার মানুষ ঘিরে ধরে বিভিন্ন অভিযোগ করে বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় কোন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ প্রশাসন বা সরকারি আধিকারিক নিহতের পরিবারের কোনো খোঁজ খবর নেননি।
তাঁরা আরো বলেন বাড়ি থেকে যাওয়ার মাত্র দুদিনের ব্যবধানে মোতাহার শেখের রহস্য মৃত্যু ঘিরে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় মানুষ আরও বলেন তাহলে কি এভাবেই বাংলার হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ও ফেরিওয়ালা দের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, আর আমাদের নিরব ভাবে তা মেনে নিতে হবে ? নিহত পরিবার এর স্ত্রী ও স্থানীয় লোকজন নিহত মোতাহার শেখের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় গভীর ক্ষতের চিহ্ন দেখে অনুমান করেন যে মোতাহার শেখ কে কোন কুচক্রী মহল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে। এবং এই ঘটনা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে চলা মব লিঞ্চিং এরই অংশ ।
অবিলম্বে দেশের প্রত্যেকটি এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়িয়ে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
আরো প্রকাশ থাকে যে নিহত মোতাহার শেখ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। মোতাহার শেখের মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতিতে উক্ত পরিবার একেবার পথে বসতে চলেছে। নিহত মোতাহার শেখ রেখে গেছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই কন্যা ও দুই পুত্র সন্তান যার প্রথম কন্যার বয়স 14 ও ছোট পুত্রের বয়স মাত্র 5 বছর। উক্ত প্রতিনিধি দল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায় উপযুক্ত তদন্ত করার মাধ্যমে নিহত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই ।
সেই সাথে নিহত মোতাহার শেখ যেহেতু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, তাই উক্ত পরিবারকে এককালীন অর্থপ্রদান সহ পরিবারের একজনকে সরকারি কোন কাজ প্রদানের মাধ্যমে পথে বসা পরিবারের সংসার পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে উক্ত প্রতিনিধিদল।