উলুবেড়িয়া-১ ব্লক অফিস প্রাঙ্গণে ইন্টিগ্রেটেড সেটলার সহ অ্যানেরোবিক ব্যাফেল্ড রিঅ্যাক্টর (ABR) ফিল্টার নির্মিত — পরিবেশ রক্ষায় অভিনব পদক্ষেপ

Share this page

উলুবেড়িয়া-১ ব্লক অফিস প্রাঙ্গণে ইন্টিগ্রেটেড সেটলার সহ অ্যানেরোবিক ব্যাফেল্ড রিঅ্যাক্টর (ABR) ফিল্টার নির্মিত — পরিবেশ রক্ষায় অভিনব পদক্ষেপ

সভ্যতার ইতিহাসে জলকে সবসময়ই জীবনের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি জলের উৎসগুলি আজ চরম সংকটে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো অপরিশোধিত বর্জ্যজলের সরাসরি নিঃসরণ, যা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, উলুবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে—ব্লক অফিস প্রাঙ্গণে নির্মিত হয়েছে ইন্টিগ্রেটেড সেটলার সহ অ্যানেরোবিক ব্যাফেল্ড রিঅ্যাক্টর (ABR) ফিল্টার ব্যবস্থা। এই ইউনিট নির্মাণে প্রত্যেকটির খরচ হয়েছে ₹৩,২৭,৩৭৬/-। পুরো প্রকল্পটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ব্লক ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত বোস।

এই ইউনিট দু’টি বসানো হয়েছে ব্লক অফিস ক্যাম্পাসের দুই প্রান্তে, যেখানে সমস্ত বর্জ্যজল—গ্রে ওয়াটার, ব্ল্যাক ওয়াটার এবং বৃষ্টির জল—একত্রে প্রবাহিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত সংলগ্ন একটি ২৫ বিঘার পুকুরে পড়ে, যা এখানকার একমাত্র মিষ্টি জলের উৎস। পূর্বে এই বর্জ্যজল অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি ওই পুকুরে যেত। এখন তা ABR-এর মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে পুকুরে যাচ্ছে।

এই ABR ইউনিট নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম, কারণ এই ব্লক ক্যাম্পাসটি ১৪ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে একাধিক সরকারি দপ্তর—BLLRO, BLDO, খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর, সার্কেল SI অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কমিউনিটি হল, ওয়াটার প্রকল্প ক্যাম্প অফিস, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, তিনতলা কোয়ার্টার এবং মূল ব্লক অফিস ভবন। প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ মানুষ বিভিন্ন পরিষেবার জন্য এখানে আসেন। বাইরে থেকে আগত নাগরিকদের জন্য দ্বিতীয় গেটের পাশে নির্মিত হয়েছে একটি কমিউনিটি স্যানিটারি কমপ্লেক্স (Pay & Use), যেখান থেকেও বর্জ্যজল উৎপন্ন হয়।

বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮৫০০ লিটার বা ৮.৫ ঘনমিটার বর্জ্যজল এই ক্যাম্পাস থেকে নির্গত হয়। আগে এই জল সরাসরি পুকুরে পড়লেও এখন তা ABR প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিশোধনের পর পুকুরে যায়।

 

কীভাবে কাজ করে এই ABR প্রযুক্তি:

জলের প্রবাহের ধাপ:

 

🔹 ইনলেট (Effluent, Black Water, Grey Water)

🔹 সেডিমেন্টেশন ট্যাঙ্ক – ১টি (ধারণক্ষমতা: ৬.৩ ঘনমিটার)

(কঠিন বস্তু ও কণাগুলোকে আলাদা করে)

🔹 অ্যানেরোবিক ডাইজেশন চেম্বার – ৩টি (প্রতিটির ধারণক্ষমতা: ৩.০ ঘনমিটার)

(জৈব বর্জ্য ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পচিয়ে ফেলা হয়)

🔹 অ্যারোবিক ডিকম্পোজিশন চেম্বার – ১টি (ধারণক্ষমতা: ২.১ ঘনমিটার)

(জটিল জৈব বর্জ্য ভেঙে পরিবেশবান্ধব জলে পরিণত করা হয়)

 

✅ প্রতিটি ABR-এর মোট ধারণক্ষমতা: ১৭.৪০ ঘনমিটার

 

এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে ও অল্প জমিতে নির্মাণযোগ্য এবং কার্যকরী। এই ধরনের স্থাপনা ভবিষ্যতে জল সংকট মোকাবেলায় বড় ভূমিকা নিতে পারে।

 

উদ্যোগের প্রেক্ষিতে বিডিও এইচ.এম. রিয়াজুল হক বলেন:

“আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব হলো পরিবেশ রক্ষা করা। এই ধরনের ABR ফিল্টার ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা শুধু গ্রে ওয়াটার নয়, ব্ল্যাক ওয়াটারও দক্ষতার সাথে পরিশোধন করতে পারছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই প্রযুক্তি চালু করার, যাতে পুরো ব্লকই জলদূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠতে পারে।”

 

এটি নিঃসন্দেহে এক মাইলফলক, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্লক বা জেলাকেও অনুপ্রাণিত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *