নিজস্ব সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া:
উলুবেড়িয়া-১ নম্বর ব্লকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ হিসেবে আজ অনুষ্ঠিত হল ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নিয়ে এক সচেতনতা শিবির। ব্লক অফিসের সভাকক্ষে আয়োজিত এই শিবিরে অংশ নেন ব্লকের অন্তর্গত সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের ইমাম ও মুয়াজ্জিনগণ। শিবিরের নেতৃত্ব দেন ব্লকের বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অতীন্দ্র শেখর প্রামানিক, সহ-সভাপতি শাহানা বেগম, জেলা পরিষদের সদস্য নোটস সালাম, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আরজুল ইসলাম মোল্লা, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মুরাদ আলি, মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শেখ মফিজুল, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ চম্পা সামন্ত, এসিডিপিও সমিত ঘোষ সহ অন্যান্য আধিকারিকবৃন্দ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা ইমাম মোঃ আইয়ুব আলি। তিনি ইসলাম ধর্মের আলোকে বাল্যবিবাহের কুফল ও প্রাসঙ্গিক বিধান ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, “ধর্ম কখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েকে উৎসাহিত করে না। সমাজে ইমামদের ভূমিকাই হতে পারে এই অনৈতিক প্রথার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।”
বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, সমাজের ভেতরে থেকে পরিবর্তন আনা। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মত সম্মানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছে দিলে সমাজে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। আমরা চাই প্রতিটি পরিবার বুঝুক—একটি মেয়ের জীবনে শিক্ষা ও পরিপক্বতা কতটা জরুরি।”
জেলা পরিষদের সদস্য নোটস সালাম বলেন, “এই ধরনের সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বকে একজোট হতে হবে। ইমাম-মুয়াজ্জিনরা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁদের প্রতিটি কথাই সমাজে গুরুত্ব পায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা এই ব্যাধির মূলোৎপাটন করতে পারি।”
পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আরজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “বাল্যবিবাহের প্রভাব শুধু একটি পরিবারের উপর নয়, পুরো সমাজের উপর পড়ে। অল্প বয়সে বিয়ে মানেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শিক্ষার অভাব এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নের মৃত্যু। এই সভা প্রমাণ করছে প্রশাসন এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব একসাথে কাজ করলে সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব।”
ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও তাদের উৎসাহ এই শিবিরকে সার্থক করেছে। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন আগামী দিনগুলোতে খুৎবার মাধ্যমে এই বার্তা আরও বেশি করে সমাজে ছড়িয়ে দেবেন।
এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে রইল—যেখানে প্রশাসন, পঞ্চায়েত ও ধর্মীয় নেতৃত্ব একত্রিত হয়ে সমাজে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করল।